Ad

Tuesday, February 26, 2013

৮৭ শতাংশ জনগণ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৯টি গণমাধ্যমের পরিচালিত জরিপের ফলাফল

সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠার প্রেক্ষাপটে ৯টি গণমাধ্যম তাদের অনলাইনে এ বিষয়ে পাঠকদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায় ৮৭ শতাংশ পাঠক জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন মহল থেকে যখন জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং তাদের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে তখন জামায়াত শিবির বিরোধী হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমের জরিপেই জনমতের পুরো ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ এখন গণদাবি – আপনার মত কী?” জবাবে ৮৯.৯৫ % পাঠক জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ভোট দেন । অন্যদিকে মাত্র ৮.৬৮ % পাঠক জাময়াত নিষিদ্ধের পক্ষে তাদের মত দেন। নীরব থাকেন ১.৩৭ % ।
দৈনিক প্রথম আলো ১৫ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সরকার সম হবে কি?’
এর উত্তরে ৭২.৭৩% পাঠক বিপক্ষে ভোট দেন এবং ২৪.৮১% পাঠক পক্ষে মত দেন। ২.৪৬% পাঠক মন্তব্য নেই বলে জবাব দেন। প্রথম আলোর ওই দিনের অনলাইন জরিপে অংশ নেন ৩৭০৪ জন।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশে রাজনীতি করার। সারাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ওঠার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আপনি কি একমত?’ রাত ৮:১৮
মিনিট পর্যন্ত ৬৫%ঁ ভোটার জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে এবং ৩৫% ভোটার নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেন।
এসময় জরিপে ভোটার সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৩৩৩৭ জন।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরে ৯টার দিকে প্রকাশিত ফলাফলে দেখানো হয় জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৬৫ % এর স্থলে মাত্র ১০% ভোটার মত দিয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে কয়েক মিনিট আগে উল্লেখিত ৩৫% এর স্থলে ৯০% ভোটার দেখানো হয়। এসময় মোট ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৯৭৩২ জন। এ নিয়ে পাঠক বিডিনিউজের বিরুদ্ধে দ্’ুধরনের তথ্যের স্ক্রিন শর্ট তুলে ধরে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন ‘বিডিনিউজ তাদের জালিয়াতিকে বৈধতা দিতে নিজেদের পে সাফাই গেয়ে উল্টো একটি নিউজ করেছে! দেখেন কতটা মূর্খ! সে নিউজটি পড়লেও কিন্তু ওদের চুরির ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। জরিপের ফলাফল জালিয়াতির বিষয়টি বিডিনিউজ কর্তৃপ নিজেরাই স্বীকার করল বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিডিনিউজের মুখপাত্র বলেন, ‘একই আইপি থেকে অবিরত ভোট দেয়ার ঘটনা চিহ্নিত করার পর একই আইপি থেকে অতিরিক্ত ভোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’ অথচ বাস্তবতা হলো বিডিনিউজে একই আইপি থেকে ১ বারের অধিক ভোট দেয়া যায় না। যা যে কেউ পরিা দেখতে পারেন। তার মানে ফলাফল তাদের পছন্দমত না হওয়ার কারনে তারা ভোট বাতিল করে ফলাফলে ব্যাপক জালিয়াতি করেছে।
বাংলানিউজ ৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘শাহবাগের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করেন কিনা?’ ওইদিন বিকাল ৫ টা ৮ মিনিটের সময় ফলাফল ছিল শাহবাগের আন্দোলনের পক্ষে ৩ হাজার ৮৩৫ জন এবং বিপক্ষে ১৪ হাজার ৬৬৮ জন। এর মাত্র ১২ মিনিট পরে ৫টা ২০ মিনিটের সময় ফলাফল দেখানো হয় শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে ১৫ হাজার ৪৯২ এবং বিপক্ষে মাত্র ৩৩৩। নিজেদের ইচ্ছামত এ ধরনের ফলাফল পরিবর্তন নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগসহ বাংলা নিউজের বিরুদ্ধে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন পাঠক। তাদের জালিয়াতি নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের তীব্র সমালোচনার পর বাংলা নিউজ পুরো জরিপটি সরিয়ে ফেলে। তবে অনেকের কাছে এখনো রয়ে গেছে জরিপের স্ক্রিন শট। এরপর থেকে বাংলা নিউজ আর কোন জরিপ করেনি।
দৈনিক ইত্তেফাক ২১ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা শ্রেয়- ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে আপনি কি একমত?’ উত্তরে ৬০.০১% হ্যাঁ এবং ৩৯.৯% না বলে জবাব দেন। কিন্তু পরের দিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে ফলাফল দেখানো হয় ৪০% হ্যাঁ এবং ৫৯% না।
ইত্তেফাক ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের জনমত জরিপের ফলাফল প্রিন্ট সংস্করনে পাল্টে দেয়। এ নিয়েও পাঠক মহলে নানা সমালোচনা চলে।
দৈনিক যায়যায়দিন গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের সমর্থন করেন কি না?’ জবাবে ১৮% হ্যাঁ এবং ৮২% পাঠক না সূচক উত্তর দেন।
দৈনিক সমকাল গত ১৮ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সাথে কোনো ধরনের সংলাপ নয়’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কি সমর্থন করেন?’ জবাবে ৬% হ্যাঁ এবং ৯৪% নাসূচক উত্তর দেন।
দৈনিক ইনকিলাব গত ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘জামায়াত-শিবির ধরার নামে সারা দেশে গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে তা বন্ধ হওয়া উচিত কিনা?’ জবাবে ৮১.২৭% হ্যা এবং ১৭.৭৪% না সূচক উত্তর দেন।
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ ১৯ নভেম্বর পরিচালিত জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তা কি সমর্থন করেন?’ জবাবে জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ৯১% এবং মাত্র ৯% নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন।
দৈনিক ইত্তেফাক পরিচালিত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনলাইন জরিপে প্রশ্ন ছিল ‘ব্লগার রাজীব হত্যায় জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবী করেছে জামায়াত। তাদের এই দাবী সমর্থন করেন?’
এর জবাবে জামায়াতের দাবির পক্ষে ভোট দেন ৫৮.৪% এবং বিপক্ষে ভোট দেন ৪১.৫% ।
দৈনিক ইত্তেফাক পরের দিন তাদের প্রিন্ট সংস্করণে অনলাইন জরিপের যে ফলাফল প্রকাশ করে তাতে ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। যেমন ওইদিন রাতে পরিচালিত জরিপে অনলাইনে ৫৮.৪ % জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্ত প্রিন্ট সংস্করণে তারা ফলাফল পরিবর্তন করে পরের দিন উল্লেখ করে জামায়াতের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৫%। অন্যদিকে বিপক্ষে ৪১.৫ % এর স্থলে উল্লেখ করে ৬৫%। অনলাইন সংস্করণ এবং প্রিন্ট সংস্করণে তথ্যের এ গরমিল এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
ইত্তেফাক অনলাইন জরিপে ৭৭৯৮ জন ভোটার অংশ নেন।

No comments:

Post a Comment

Ad