Ad

Tuesday, February 26, 2013

প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করায় শাস্তি হলেও মহানবী (সা:)-কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের মতো অপরাধের অভিযোগে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছে পুলিশ। কয়েকজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির রায়ও দিয়েছে আদালত। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করার অভিযোগে ২০১০ সালে কিছুদিনের জন্য ফেসবুক সাময়িক নিষিদ্ধও করা করা হয়েছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে মহানবী (সা:) এবং ইসলামকে অবমাননাকারী কুরুচীপূর্ণ ব্লগারদের শনাক্ত করে এখনো উল্লেখযোগ্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 
এর আগে গত বছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির শিক্ষক রুহুল খন্দকারকে শাস্তিস্বরূপ ৬ মাসের কারাদ-ের আদেশ  দেয় আদালত। তাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় আবু নাইম যোবায়ের নামে এক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন এবং এ অপরাধে তার সাজা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে তার বাড়িতে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলাও চালিয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
২০১১ সালের জুলাই মাসে নওগাঁর সাপাহারে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার ছবির সাথে ফনা তোলা বিষধর গোখরা সাপের ছবি ও আপত্তিকর বক্তব্য সংযুক্ত করে বিভিন্নজনের মোবাইল  ফোনের মেমোরিতে লোড দিয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে মোঃ ফিরোজ হোসেন (৩০) নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে তথ্য ও যোগাযোগ আইনের -২০০৬ সালের ৫৭-এর ২(১) ধারা মতে মামলা দায়ের করে এবং  জেলহাজতে পাঠায়। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র শফিকুল ইসলামকে ছাত্রলীগ কর্মীরা আটক করে গণপিটুনি দিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
কিছুদিন পূর্বে খাগড়াছড়ি গুইমারা বড়পিলাক থেকে মোবাইল ফোনের ম্যাসেজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করলে মাটিরাংগা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সালের এসএসসি’র পরীক্ষার্থী মো: রুবেল হোসেন (১৮) নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আটক করে। পরে ৫৪নং ধারা মামলা দেখিয়ে তাকে খাগড়াছড়ি জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়। কুমিল্ল¬া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র মোঃ আরিফুজ্জামানের  ফেসবুক একাউন্টের একটি স্ট্যাটাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ওই ছাত্রকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র  সোহেল মোল্ল¬া রাজ ওরফে সোহেল রানা ফেসবুকে ব্যক্তিগত  প্রোফাইলে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে কটূক্তি ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে গত বছরের জুন মাসে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে সরকার। অপরদিকে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১০ সালের ২৯ মে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে ফেসবুক সাময়িক নিষিদ্ধ করে দেয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারী তারিখে একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্লগার আসিফ মহীউদ্দীন ও থাবা বাবা ওরফে রাজীব আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্মকে আক্রমণ, কুৎসা রটনা, কুরআন শরিফের আয়াত বিকৃত করার দায়ে ব্যবস্থা নিতে গত বছরই উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। গত বছরের মে মাসে হাইকোর্টে এই মর্মে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ বিভাগের অনুরোধ ও আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি পুলিশের অনুরোধে রাজীব পরিচালিত  ধর্মকারী সাইটটি তুলে নিলেও এটি ফের চালু করা হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমমনা ১৩ দলের সংবাদ সম্মেলনে ২০১১ সালের ১৭ মে তারিখে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য করায় স্বঘোষিত নাস্তিক এবং ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-এর নেতা আসিফ মহিউদ্দীনকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে ব্ল¬গার আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নিজ বাড়ীর কাছেই খুন হন। এরপর তার ফেসবুক পেজ থাবা বাবা থেকে ইসলাম ও মহানবী (সা:)-কে কটাক্ষ করে নোংরা ও কুরুচীপূর্ণ লিঙ্কের বরাত দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বেশ কিছু লেখা ছাপা হয়। তখন বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয় যে, এসব লেখা ও বক্তব্য থাবা বাবার নয়। এটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাজ। তারা থাবা বাবার একাউন্ট হ্যাক করে এ কাজ করেছে। অন্যদিকে থাবা বাবা ওরফে রাজীবের খুনের পর শাহবাগে তার জানাজা পরিচালনাকারী ইমামকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয় ফারাবি শফিউর রহমান নামে একজন। গত রবিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকার এক মেস থেকে ফারাবি শফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশি¬ষ্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত ব¬øগার রাজীবের জানাজা পরিচালনাকারী ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ার কথা স্বীকারও করেছেন ফারাবি। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ এবং গোয়েন্দারা ফেসবুকের সূত্র ধরে ফারাবী এবং প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তিকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারলেও ইসলাম ও মহানবী (সা:)-কে কটাক্ষ করে নোংরা ও কুরুচীপূর্ণ লিঙ্কদাতাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। বরং অনেক ব্লগারের ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন সামাজিক সাইট থেকে কিছু তথ্য মুছে ফেলে এবং ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়ে গত কিছুদিন যাবত সারা দেশে বিরাজমান অসহনীয় পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিসি) সাবেক সভাপতি হাবিবুল¬া এন করিম এর মতে, একজন ব্যক্তি যে কোন নামে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যে কোন কিছু আপলোড করুক না কেন আইটি ফরেন্সিকের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব। আমাদের দেশে বেসরকারী পর্যায়ে আইটি ফরেন্সিকের ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারীভাবে শুধু বিসিসি কিছু কিছু শুরু করেছে। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অনেক কম।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইটি ফরেন্সিকের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তিকে আরও আধুনিকায়ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইটি ফরেন্সিকের বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হলে সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িতদের সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

No comments:

Post a Comment

Ad