Ad

Monday, October 28, 2013

২৮ অক্টোবর একটি নির্মম ইতিহাসের নাম !

২৮ অক্টোবর! ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঘৃণিত অধ্যয়ের নাম। পবিত্র রমজান মাস সবেমাত্র আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছিল। অনেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য গ্রামের বাড়িতে। ঢাকা প্রায় ফাঁকা। ঈদের শেষে অনেকেই ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক সেই মূহুর্তে আওয়ামীলীগ লগি-বৈঠা দিয়ে চালিয়েছিল অমানুষিক তান্ডব। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছিল এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার মহাপরিকল্পনা। ঈদের ঠিক ২ দিনের মাথায় তারা এই চক্রান্তের জাল বিস্তার করে। লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মম ও পৈশাটিকভাবে হত্যা করা জামাত শিবিরের কর্মীদের। দেশীয় মিডিয়া সহ বিদেশী সব মিডিয়ায় এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেখে অনেকে মর্মাহত হয়। আজও সেই দিনের ভয়াবহতার কোন বিচার হয়নি।

কি ঘটেছিল সেদিন

জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর আলোকে ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সমাবেশ ছিল। ঈদের ছুটির কারণে মাত্র কয়েকশত লোকের সমাগম ছিল। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রোগ্রামের মঞ্চ তৈরী পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সেখানে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছিল জামায়াত-শিবিরের নিবেদিত কর্মীগণ। কিন্তু হঠাৎ করে সকাল ৯.০০ টার দিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সমাবেশ স্থলের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার-নেজা-বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হামলাকারীরা। সাথে যোগ দিয়েছিল বামপন্থী সংগঠনসমূহের অসংখ্য সন্ত্রাসী। মুহুর্মুহু আক্রমণ, বোমাবাজি, পিস্তল উচিয়ে সমাবেশ স্থলের ভিতরে গুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং সর্বপরি লগি আর তলোয়ারের মত ধারালো বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে যে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করেছিল তার বর্ণনা দেয়া ভার। এ যেন সবুজ জনপদে হিংস্র নেকড়ের আগ্রাসী ছোবল। নিরস্ত্র সাধারণ কর্মীদের উপর হামলে পড়া আওয়ামী জঙ্গিদের অত্যাচার নির্যাতন ও উন্মত্ততার দৃশ্য সভ্যতার কোন মানবীয় আচারণ বলে স্বীকৃতি পেতে পারেনা।

একটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন নির্দেশের ফলে ২৭ অক্টোবরের পর দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতার জন্ম দেয়। ২৮ অক্টোবর পল্টনে পৈশাচিকভাবে মানবতা ও মনুষ্যত্বকে ভুলুন্ঠিত করে নির্মমভাবে মানুষ হত্যার যে হলি কেলি করা হয় তা ইতোপূর্বে এ দেশে ঘটেছে কিনা সন্দেহ! যখন কেয়ারটেকার সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সব কর্মকান্ড সম্পাদন করছিল ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে, অবরোধ, বিক্ষোভ এবং লগি-বৈঠার ভয় দেখিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিস্ক্রিয় করে গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল তা এই পল্টনের নির্মম হত্যা কান্ডের মাধ্যমে শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে পদানত করে ৭২ এবং ৭৫ এর মতো বাকশালী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। এই ঘটনা শান্তিকামী মানুষের বিবেককে আহত করেছে। নিরস্ত্র মানুষের বিবেককে দিয়েছে নাড়া। “নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে রয়টার হেড কোয়ার্টারের ওপর স্থাপিত বিশাল টিভি স্ক্রিনে বার বার প্রদর্শিত হচ্ছিল এ অসহায় মানুষদের নির্মমভাবে হত্যার এই দৃশ্য। ঘটনার বীভৎসতা দেখে চোখ ঢেকেছেন আমেরিকানরা। আমেরিকান বাংলাদেশিরা তাদের সন্তানদের টিভি দেখতে দেয়নি, যাতে তারা জীবন্ত মানুষকে হত্যার দৃশ্যটি না দেখে। যে দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী স্তব্ধ। লজ্জায় বাকরুদ্ধ হয়েছিল বাংলার ১৪ কোটি জনগণ। সেই দৃশ্য দেখে শেখ হাসিনা কি ব্যথিত হয়েছিলেন? কারণ তিনিও তো সন্তানের মা! ”

শেখ হাসিনা সহ কথিত ১৪ দলের নেতারা ২৮ অক্টোবরের ঘটনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে উল্টিয়ে সাজিয়েছিল। কোথায় পুরানা পল্টনের মোড় আর কোথায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। “শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলন করে মিথ্যাচার করেছিলেন যে, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আগে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করেছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছিল কিনা তার নজির নেই। তিনি আরো বলেছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভিতর থেকে গুলি করা হয়েছে।” আশ্চার্য বিষয়! কোথায় পল্টন মোড় আর বায়তুল মোকাররম মসজিদ। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মুখোশ পরে সমাবেশ স্থলের মধ্যে গুলি চালিয়েছে তার দৃশ্য ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন চ্যানেল দেখিয়েছে তা বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষ সহ সারা পৃথিবীর মানুষ অবলোকন করেছে তার পরেও কিভাবে তিনি এমন ডাহা মিথ্যা বলতে পারেন। এ ধরনের মিথ্যাচার একমাত্র তারঁ মুখ দিয়ে বের হতে পারে। কারণ দেশবাসী জানে তিনি একজন স্পষ্টমিথ্যাবাদী। যাকে আমরা মাঝে মধ্যে একজন ঝানু অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে পেয়েছি। 

জাতির কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা এতো নির্মম কেন? আর কত এমন অমানবিক, নির্মম ও পাশবিক চিত্র আমাদের দেখতে হবে? কেন একের পর এক মায়ের বুক খালি হবে? আর কত স্বজনদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাসকে ভারী করবে? এ পাশবিকতা থেকে কি কোনো মুক্তি নেই? কি সেই মুক্তির পথ?

এখনো মা কাঁদে !

যাদের সন্তান, ভাই, স্বামী সেদিনের ঘটনায় নিহত হয়েছে তাদের বুক ফাটা আর্তনাদ সন্তনহারা মায়ের বেদনা কিংবা স্বামীহারা স্ত্রীর অথবা ভাইহারা বোনের আর্তনাদ খোদার আরশকে পর্যন্ত প্রকম্পিত করে তুলেছিল। বাবা হিসেবে ছেলের লাশ কাঁধে নিয়ে হাটা যে কি মর্মান্তিক শুধু ভূক্তভোগীর পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব। তারা কখনো ভাবেনি নিজের হাতে বড় করে তোলা প্রিয় সন্তানটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। তারা একটি লাশই শুধু পায়নি, পেয়েছে ক্ষতবিক্ষত হয়ে থেতলে যাওয়া মাথা, পেয়েছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুপিয়ে রক্তাক্ত করা একটি শরীর, এমন একটি যায়গা পায়নি যেখানে স্নেহের পরশ দিয়ে কিংবা মুখের আদরের শেষ সম্বল টুকু একে দিবে। মোট এমন একটি যায়গা পায়নি যেখানে সন্ত্রাসী তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও লগি-বৈঠা দিয়ে আঘাত করেনি। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, একটি অক্ষত লাশ আর ক্ষতবিক্ষত একটি লাশ বহন করা কি সমান ? তাদের মা কিংবা ভাইয়েরা কি অপরাধ করেছিল যার জন্য একটি অক্ষত লাশও তারা পেল না। এ কোন সভ্য দেশে বাস করছি আমরা। এই নির্মম সভ্যতার আমরা অবসান চাই, অবসান চাই এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেরও। এক মা আহাজারী করে বলছিল “এখন মনে হয় আমার প্রিয়জন আমার কাছেই আছে। কখনো অবচেতন মনে মা ডাকটিও প্রতিধ্বনি হয় বার বার। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম আমাদের মানতে হয়। কিন্তু এই নিয়ম মানা যখন বাধ্যতামুলক হয়ে দাঁড়ায় কষ্টটি হয় তখনই, নিজেকে মনে হয় অসহায়। নিরূপায় হয়ে প্রার্থনা করি, আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়।”

শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমণ করে লগি, বৈঠা  দিয়ে পিটিয়ে এই সব যুকবদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে প্রতিটি মমতাময়ী মায়ের হৃদয়। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও লাশের উপর উঠে যেভাবে নাচানাচি করেছে তাতে চরম শত্রুও গা শিউরে উঠে। মানবতার এ নির্মম অপমান বিবেকবান মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটি স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি ফিলিস্তিন ! নাকি ইরাক কিংবা কাশ্মীর!

আবার ফিরে এলো সেই ২৮ অক্টোবর। বারবার সেই দিন ফিরে আসে, ফিরে আসে সেই দিনের ঘৃনিত-মমান্তিক বেদনাময় স্মৃতি, ফিরে আসেনা সেদিনের সন্তানহারা মায়ের সন্তান, স্বামীহারা স্ত্রীর স্বামী, পিতা হারা সন্তানের পিতা। বিচারের দাবি ডুকরে কাঁদে আজ মানবতা। এই নির্মমতার শেষ কোথায়? হবে কি বিচার ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরিকল্পনাকারী কুশিলবদের?

শেখ হুমায়ুন কবির

mdhumaun@yahoo.com

No comments:

Post a Comment

Ad