Ad

Saturday, March 2, 2013

রক্তপিপাসু খুনি সরকারের পদত্যাগ চাই : খালেদা গণহত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসুন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটাচ্ছে : নির্যাতিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের চাপ দেয়া হচ্ছে : গণহত্যার প্রতিবাদে ৫ মার্চ মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

রক্তপিপাসু খুনি সরকারের পদত্যাগ চাই : খালেদা গণহত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসুন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুত্সা রটাচ্ছে : নির্যাতিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের চাপ দেয়া হচ্ছে : গণহত্যার প্রতিবাদে ৫ মার্চ মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল





প্রতিবাদী নিরস্ত্র ধর্মপ্রাণ জনতাকে গণহারে গুলি করে হত্যাকে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, গণহত্যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘রক্তপিপাসু খুনি সরকার’ বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন। গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার ডাক দিয়েছেন দেশের প্রায় সব বিরোধী দলের এই নেতা।
গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছেন তিনি। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া আজ বিকাল তিনটায় ঢাকার নয়াপল্টনে প্রতিবাদ মিছিল এবং সারাদেশে মহানগর ও জেলায় জেলায় একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি নিবর্তনে নিগৃহীত কোনো নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য।
খালেদা জিয়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ সঙ্কট’ আখ্যায়িত করে বলেন, এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা স্বাধীনতার পর আর কখনও সৃষ্টি হয়নি। গোটা জাতিকে আজ বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম পবিত্র ইসলাম এবং আমাদের মহান স্বাধীনতাকে আজ পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এবং স্বাধীনতায় কোনো বিরোধ নেই। অথচ একটি কুচক্রী মহল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে পবিত্র ইসলাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে নোংরা কুত্সা রটনা করছে। নির্যাতিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বেআইনিভাবে গ্রেফতারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারবিরোধী সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে সম্মানিত নাগরিকদের নাম ধরে হুমকি দিচ্ছে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধরে ধরে জবাই করার হুমকি দিচ্ছে। বর্তমান সরকার জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে এক ভয়ঙ্কর সংঘাত ও সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ অনৈক্য ও সংঘাত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি এ ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এতে স্বাভাবিকভাবেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিদারুণ আহত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ধর্মপ্রাণ মানুষ এর বিরুদ্ধে যখন শান্তিপূর্ণ পন্থায় প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে, অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি তুলেছে, তখন সরকার তাদের ওপর চালিয়েছে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। শুধু তা-ই নয়, এসব ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করে সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে মুসল্লি, খতিব ও ইমামদের পর্যন্ত হেনস্তা করেছে। প্রতিবাদ মিছিল থেকে কিশোর-তরুণদের ধরে নিয়ে তাদের গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজ গৃহে গৃহবধূকে পর্যন্ত গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিত্সা শেষে শুক্রবার রাতে দেশে ফেরার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশান অফিসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, সারোয়ারি রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, সহ-সভাপতি এম. মোর্শেদ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ।
দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেয়া এই বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, আমি স্তম্ভিত। আমি ক্ষুব্ধ। আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কোনো ভাষা আমার নেই। আমাদের এই দেশে আবার চলছে পৈশাচিক গণহত্যা। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা চলছে। গণহত্যার পৈশাচিক তাণ্ডবে মেতে উঠেছে সরকার। ফ্যাসিবাদের নগ্ন থাবায় রক্ত ঝরছে, প্রাণ যাচ্ছে দেশের শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র নাগরিকদের। বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর, এমনকি কুলবধূরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না এই নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে। মনে হচ্ছে, কোনো ভিনদেশি হানাদার যেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। কোনো একটি সরকার নিজের দেশের নাগরিকের ওপর এভাবে গণহত্যা চালাতে পারে, তা আমাদের কল্পনারও অতীত। এ ধরনের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই আমরা ১৯৭১ সালে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলাম। আমি এ মুহূর্তে এ গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। আমি সরকারকে হুশিয়ার করে বলতে চাই, এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের প্রতি আহ্বান : খালেদা জিয়া পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনীসহ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের টাকায় যে অস্ত্র কেনা হয়, সেই অস্ত্র নির্বিচারে জনগণের ওপর ব্যবহার করবেন না। আপনাদের পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে দেশের জনগণের জীবন রক্ষা করা। নির্বিচারে তাদের জীবন কেড়ে নেয়া নয়। একটি গণবিচ্ছিন্ন ব্যর্থ সরকারের অন্যায় হুকুমে আপনারা গণহত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না। বরং জনগণের মৌলিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রুহের মাগফিরাত কামনা : বিরোধীদলীয় নেতা তার বক্তব্যে গত কয়েক দিনের ভয়াবহ সংঘাতে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং একইসঙ্গে তাদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, এসব নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল সরকার সৃষ্ট নৈরাজ্যের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে হত্যাকাণ্ডে উত্সাহ দেয়া : খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশে চালানো হত্যাকাণ্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সরকারি দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসব হত্যাকাণ্ডে তাদের উত্সাহিত করা হচ্ছে। একটি হত্যার ঘটনারও কোনো তদন্ত, প্রতিকার কিংবা বিচারের উদ্যোগ সরকার নেয়নি। শাহবাগিদের নাম উল্লেখ না করেই খালেদা জিয়া বলেন, অপরদিকে একটি গোষ্ঠীকে সরকার উসকানিমূলক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সংঘটনে প্রতিনিয়ত আসকারা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। জাতীয় জীবনে বিভেদ-বিভাজনকে উসকে দিচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুরে উত্সাহিত করছে। এসব তত্পরতার মাধ্যমে আমাদের জনজীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় অর্থনীতিকে যারা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার তাদের বাধা দেয়ার পরিবর্তে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রীরা তাদের কাছে গিয়ে এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থন যোগাচ্ছে।
ন্যায়বিচারের পরিবেশ ধ্বংস : খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি নিবর্তনে নিগৃহীত কোনো নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার চাই, তবে... : খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বার বার পরিষ্কারভাবে বলেছি, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার আমরা চাই। সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ। সে বিচার হবে দেশি ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে। আমরা বিচারের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পক্ষপাতি নই। আপনারা জানেন, এ বিচার প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনাল ও আইন নিয়ে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সে কারণে আমরা বার বার সরকারকে সতর্ক করে বলেছি যে, প্রশ্নবিদ্ধ কোনো বিচার জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে বিভক্তির দিকেই ঠেলে দেবে।
তিনি বলেন, কাজেই এ ব্যাপারে একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠন খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান দেয়নি। কারও সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনাও করেনি। বরং যারা বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো দূর করার কথা বলেছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলেছে, তাদের বিচারবিরোধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল গঠন করল সরকার, এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও সমর্থন দিল সরকার : খালেদা জিয়া বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচারক নিয়োগ, প্রসিকিউশন গঠন, তদন্ত পরিচালনা ও আইনজীবী নিয়োগ সবকিছুই এ সরকার করেছে। অথচ ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়, সরকার তার সঙ্গেও একাত্মতা ঘোষণা করে। শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিটি অভিযুক্তকে ফাঁসি দেয়ার যে দাবি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শুধু সমর্থনই ব্যক্ত করেননি বরং ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনায় রেখে রায় দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।
নিরপেক্ষ বিচার কাজ করা সম্ভব নয় : এসব ঘটনার মাধ্যমে ন্যায়বিচারের সর্বশেষ আশাটুকুও সম্পূর্ণ তিরোহিত হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারকের পক্ষেই স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্য পরিচালনা কিংবা রায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই এই ট্রাইবুনালের যে-কোনো রায়ই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, সরকার বিচার প্রক্রিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যেই ন্যায়বিচারের পরিবেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে এক ভয়ঙ্কর সংঘাত ও সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি নাগরিক আজ উত্কণ্ঠিত। সবার নিরাপত্তা আজ বিপন্ন। এই অনৈক্য ও সংঘাত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও আজ গুরুতর হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সব দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই বহন করতে হবে।
সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই : খালেদা জিয়া বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার ওপর বিক্ষোভের চাপ প্রয়োগকে সমর্থন করে, জাতিকে বিভক্ত করে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়ে এবং নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় থাকার সব নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশ আরও ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে। সে কারণে আমরা অনতিবিলম্বে এই রক্তপিপাসু খুনি সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
সরকারি চক্রান্তে সংখ্যালঘুদের নাজেহাল: খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়ে দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরা একই উদ্দেশ্যে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। আমি সরকারকে এমন আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র থেকে বিরত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। দেশবাসীকে আমি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান : খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থরক্ষায় আপনারা যেমন সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছিলেন, আজ দেশ ও জাতির এই দুঃসময়ে ঠিক সেভাবেই জনগণের প্রকৃত আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামকে প্রচার ও প্রকাশ করে চলমান গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিন।
বিএনপি শান্তির পক্ষে : খালেদা জিয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ-হানাহানির বিপক্ষে। আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে। দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান। কাজেই সরকার যে ভয়াবহ অবস্থার দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে, গণহত্যায় মেতে উঠেছে, তাতে দেশের দায়িত্বশীল সর্ববৃহত্ রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা নিশ্চুপ দর্শক হয়ে থাকতে পারি না।
জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখুন : খালেদা জিয়া বলেন, আমি সারাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে এ সরকারের ঘৃণ্য ও গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্যও আহ্বান জানাই। আমি দেশবাসীকে এই সঙ্কট মুহূর্তে রাজপথে নেমে আসার ডাক দিচ্ছি।
কর্মসূচি : খালেদা জিয়া বলেন, আজ (শনিবার) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকাল তিনটায় প্রতিবাদ মিছিল হবে। একই সঙ্গে একই সময়ে সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরগুলোতে বের হবে প্রতিবাদ মিছিল। সরকারি সন্ত্রাস ও গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এসব মিছিলে আমি সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী ৫ মার্চ মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি সরকার ও প্রশাসনকে বলবো, জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কোনো বাধা সৃষ্টি চেষ্টা করবেন না। আমি বলবো, আর একটি গুলিও যেন চালানো না হয়। জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
সরকারের কড়া সমালোচনা: তিনি বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকার। অযোগ্যতা, সন্ত্রাস ও নৃশংসতায় তারা নিজেদের অতীত রেকর্ডও এবার ভঙ্গ করেছে। এরা সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ছলে-বলে-কলে-কৌশলে প্রচার মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এরা প্রকৃত জনমতকে আড়াল করতে চাইছে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তারা নিজেরাও জানে। তাই ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনী প্রহসন করে আবার গদিতে বসতে চায়।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণদাবি, জাতীয় সঙ্কট এবং তাদের সীমাহীন ব্যর্থতা ও দুর্নীতি থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অসত্ উদ্দেশ্যে তারা দেশকে চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গুম, খুন, সন্ত্রাস, গণহত্যা, হামলা-মামলা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করেছে তারা। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে, রক্তার্জিত গণতন্ত্রকে এভাবে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। তাই সব ধর্মমতের এবং পাহাড় ও সমতলবাসী প্রতিটি গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আমার আহ্বান, দল-মত-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সবাই মিলে আসুন দেশ বাঁচাই, মানুষ বাঁচাই।
আসুন, ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে রক্ষা করি। জনগণের জানমালের হেফাজত করি। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানাই। জাতীয় ঐক্য, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করি।

No comments:

Post a Comment

Ad