রিমান্ড! সাধারণ
মানুষ
আতঙ্কিত!
বৃটিশ
বিরোধী গণ-আন্দোলন থামাতে ১৮৯৮ সালে ইংরেজরা র্সবপ্রথম নিবর্তনমূলক আইন তৈরী করে। তারা
ওই আইনের ৫৪ ধারায় লাখ লাখ মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতো। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন
ঠেকাতে তারা এ ধারাটি ব্যবহার করেছিল। পাকিস্তান আমলেও নিপীড়ন চালানোর হাতিয়ার ছিল
৫৪ ধারা। ¯^vaxbZvi
পর এ ধারাটির বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন এমনকি তারাও ক্ষমতায়
গিয়ে এ ধারাটি নিজেরদের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছেন। নিবর্তনমূলক এ আইনটি এখন ব্যবহৃত
হচ্ছে দমন পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা আছে, ‘যেকোন পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অথবা পরোয়ানা ছাড়াই, যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন। কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তি
অথবা এ ধরনের কাজে জড়িত ব্যক্তি অথবা এ ধরনের কাজে জড়িত বলে যার বিরুদ্ধে যুক্তসঙ্গত
অভিযোগ করা হয়েছে অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গেছে বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে। অপরাধী
বলে ঘোষিত ব্যক্তি, চুরি যাওয়া জিনিস থাকতে পারে এমন কোনো
ব্যক্তি, পুলিশ কর্মকর্তাকে কাজে বাধাদানকারী, প্রতিরক্ষা বাহিনী হতে পালানো ব্যক্তি, বিদেশে
অপরাধ করে দেশে ফেরত ব্যক্তি, মুক্তিপ্রাপ্ত
আসামী মুক্তির নিয়ম লঙ্ঘন করলে এবং অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে গ্রেফতারের
অনুরোধকৃত ব্যক্তিদের এ আইনে গ্রেফতার করা যায়।
ব্রিটিশদের
প্রণীত ওই ফৌজদারী আইনের নিবর্তনমূলক ৫৪ ধারা ¯^vaxb বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ধারা বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার
সম্পর্কিত ৩১, ৩৩(ক), ৩৩(খ)
ও ৩৫(৫) ধারা পরিপন্থী। ধারাগুলোতে নির্যাতন নিষিদ্ধ ও ব্যক্তি ¯^vYxZv অক্ষুণ্ন রাখার কথা বলা হলেও ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগের কারণে এ
দেশে মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে। সংবিধানের ৩১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোনো স্থানে অবস্থানরত
প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপারপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য
অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, ¯^vaxbZv, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি না ঘটে।’
তবে পুলিশ
হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ বা রিমান্ড এক মুর্তিমান আতঙ্কের নাম। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক
নেতাকর্মীদের জন্য। জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের
ওপর চরমভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে। সাম্প্রতি এর মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ফৌজদারী
আইনে তদন্তের ¯^v‡_©
অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি থাকলেও সেখানে নির্যাতন
করা বা জোরপূর্বক ¯^xKv‡ivw³ আদায়ের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা থাকলে তা মানছেনা পুলিশ।
ফৌজদার আইনের ১৬৭ ধারায় মামলা তদন্তের ¯^v‡_© ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ¯^v‡c‡ÿ অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু এ জিজ্ঞাসাবাদ মানুষের
কাছে এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। কারণ এ ধারনা এখন বদ্ধমূল যে রিমান্ড মানেই নির্যাতন। রিমান্ড মানেই মানুষিক
ও শারীরীকভাবে বিধ্বস্ত করা। চুরি মামলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মামলা সব মামলার আসামিকেই
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাচ্ছে। এমনকি ৫৪ ধারায় আটক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও
রিমান্ড নিচ্ছে পুলিশ। সম্প্রতি সরকারের আমলে এর প্রবণতা বেড়েছে ভয়াবহ আকারে। আন্দোলনকে দুর্বল করতে সব সরকারের আমলেই
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এ সরকারের আমলে গ্রেফতার মানেই রিমান্ড।
গ্রেফতার মানেই রিমান্ডের নামে নির্যাতন। বিষয়টি বোদ্ধাদের ভাবনায় ফেলেছে।
বর্তমান
সরকারের আমলে সাংবাদিকদের পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়েছে। দেশবন্যে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে উলাঙ্গ করে নির্যাতন
করেছে। সাংবাদিক মহলকে এই সরকারের নির্যাতন এবং রিমান্ড কালচার নিয়ে ভাবনায় ফেলেছে।
অথচ সাংবাদিক দম্পতি সাগররুনি হত্যার বিচারে
সরকারের নেই কোন উদ্যোগ।
সম্প্রতি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার এক কর্মকর্তা এক নারীকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে
বলে অভিযোগ উঠে। পুলিশের অভিযোগ ওই নারী ফেনসিডিলের ব্যবসা করেন। কিন্তু একজন নারী
ফেনসিডিলের ব্যবসা করেন বলে তাকে রিমান্ডে
নিয়ে যৌন নির্যাতনের লাইসেন্স পুলিশকে কে দিয়েছে? এমন মর্মান্তি, হৃদয়বিদারক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা অহরহই ঘটছে।
গত ১৭
wW‡m¤^i ছাত্রী সংস্থার অফিস থেকে ২১ নারীকে অযথা গ্রেফতার করে রিমান্ডে
নেওয়া হয়। ২১ জন নারীর মধ্যে একজন ৫মাসের AšÍ:¯^Z¡v নারী
ছিলেন। যাকে আজঅবদি জামিন দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী বয়াস্ক ব্যক্তি, নারী, অসুস্থ ও শিশু জামিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধীকার
পেয়ে থাকেন। হাবিবা নাসরিন কান্তা অসুস্থ হওয়া ¯^‡Z¡I তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগের দৃষ্টিগোচর হওয়া প্রয়োজন।
ফৌজদারী
কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় বলা আছে বিচারকের অনুমতি নিয়ে তদন্তের ¯^v‡_© অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তার হিফাজতে নিতে পারবে। আইনের এ ধারার সুযোগেই
পুলিশ আসামিকে হেফাজতের নিয়ে নির্যাতন চালায়। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়
যেন কোনো অভিযুক্তকে নির্যাতন করা করা না হয়, সে জন্য
হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেন ২০০৩ সালে। ‘ব্লাষ্ট বনাম বাংলাদেশ’ মামলায়
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে রিমান্ড মঞ্জুরের পর এবং রিমান্ড থেকে ফেরার পর নিয়ম
আদালতকে মেডিকেল রিপোর্ট পরীক্ষা করতে হবে। অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর তাঁর
AvZ¥xq¯^Rb‡K খবর দিতে হবে। অভিযুক্তকে কথা বলতে দিতে হবে তার আইনজীবীর
সাথে। আইনজীবীর উপস্থিতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা রয়েছে। এমন একটি ঘরে তাঁকে
জিজ্ঞাসাবদ করতে হবে, যেখানে বাইরে থেকে অভিযুক্তকে
দেখা যাবে। কিন্তু পুলিশ উচ্চ আদালতের এ নির্দেশ থুড়াই কেয়ার করছে। নিম্ন আদালত রিমান্ড
মঞ্জুরের আগে ও রিমান্ড থেকে ফেরার পর মেডিকেল রিপোর্ট দেখেছেন না।
বাংলাদেশে
রিমান্ড নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা অবারিত। মুলা চুরির অভিযোগে আটককৃতকেও রিমান্ডে
নেয়ার ক্ষমতা আছে পুলিশের। এমনকি ইদানিং আদালতে আত্মসমর্পনকারীকেও রিমান্ডে নেয়ার ক্ষমতাও
চর্চা করছে পুলিশ। পুলিশ ডিমান্ড করলেই ম্যাজিস্ট্রট রিমান্ড দিতে অনেকটাই বাধ্য। পুলিশের
ডিমান্ডে মঞ্জুরকৃত রিমান্ডের কমান্ডিং থাকে পুলিশের হাত। যদিও ম্যাজিষ্ট্রেটের কোনো
আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে দেয়া না দেয়ার ক্ষমতা দুটিই আছে। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশের ডিমান্ডই
বেশি কার্যকর।
রিমান্ডের
ব্যাপকতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সমালোচনা হচ্ছে। রিমান্ড মঞ্জুর প্রশ্নে সমালোচনা
হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটদেরও। পুলিশের ডিমান্ড অনুযায়ী বা পুলিশ চাহিবা মাত্র ম্যাজিস্ট্রেটেরা
কেন রিমান্ড মঞ্জুর করেন এ আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই। মামুলি সাজানো বা সন্দেহজনক
(৫৪ ধারার) মামলায়ও পুলিশ রিমান্ড ডিমান্ড করে বসছে এবং ম্যাজিস্ট্রেট তা মঞ্জুর করছেন।
এ ধরনের রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা বিচারব্যস্থাও ম্যাজিস্ট্রেটদের সম্মানে আঘাত হানছে।
বাস্তবতা হচ্ছে এ সরকারের আমলে প্রচলিত আইনে ম্যাজিস্ট্রেটদের রিমান্ড দেয়ার যত ক্ষমতা
আছে, না দেয়ার ক্ষমতা কার্যত তত নেই।
কোন কোন ক্ষেত্রে রিমান্ডে নেয়ার
পর আসামী বা তাদের ¯^Rb‡`i কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি
করে পুলিশ। না দিলে নির্যাতনের হুমকী দেয়। এরকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক
টাকা না দিলে নির্যাতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের পাশাপাশি আবার রাজনৈতিক দিকটা গুরুত্ব
সহকারে দেখা হয়।
অনুসন্ধানে পুলিশের বরাত দিয়ে
জানা যায় রিমান্ডে ১৪ ধরনের নির্যাতন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে, গিটা, বাদুর ধোলাই, ওয়াটার থেরাপি, উলঙ্গ, সারা দিন না খাইয়ে রাখা, বোতল
থেরাপি, ঝালমুড়ি, টানা
নির্যাতন ইত্যাদি।
একটি
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৫৪ ধারা সংশোধনের বিষয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ৫৪ ধারায়
গ্রেফতার ও রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এই জন্য বেঁধে দেয়া হয় ছয় মাসের সময়সীমা। ধারাটি সংশোধনের আগে এ ক্ষেত্রে কয়েক দফা
নির্দেশনা অনুসরণ করতে সরকারকে বলা হয়।
এই যদি
হয় পুলিশের রিমান্ডে নেয়ার নামে নির্যাতন কালচার তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ কোন প্রশাসনকে
তাদের বন্ধু মনে করবে। মানুষের মাঝে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ দেশবরণ্যে সাংবাদিক
মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, বিএনপি
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর মত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর
রিমান্ড আবেদন, মহিলাদের অহেতুক রিমান্ড নিয়ে নির্যাতন, অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গ্রেফতার এর পর রিমান্ড আবেদন সম্প্রতি এ বিষয় সমূহ
সাধারণ জনগনকে আতঙ্কিত ও দিধাগ্রস্থ করে ফেলেছে।
শেখ হুমায়ুন কবির
কলাম লেখক
No comments:
Post a Comment